শরণার্থীদের বিপৎসংকুল যাত্রার ছবি
চারিদিকে এদের যুদ্ধের ভয়াবহতা আর তার মধ্যেই মৃত্যু থেকে বাঁচতে ঝঁকি নিয়েই সিরিয়া ছাড়ছে অসংখ্য মানুষ। সব বাধা পেরিয়ে সবাই চাইছেন জার্মানি আসতে৷ জানেন কি, কত কঠিন তাঁদের জীবন? কতটা বন্ধুর মৃত্যুর বিভীষিকা ছেড়ে জীবনের পথ ধরা তা বোঝাতে কিছু ছবি থাকছে আজ প্রতিক্ষণের পাঠকদের জন্য।
নিজের দেশ যখন ‘দোজখ’
২০১১ সাল থেকে যুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়৷ এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ মারা গেছে৷ সিরিয়া না ছাড়লে মৃতদের কাতারে কখন যে নাম লেখাতে হবে কে জানে! দেশ ছেড়ে কোথায় যাওয়া যায়? কোন জায়গাটা জীবন-জীবিকার জন্য সবচেয়ে বেশি নিরাপদ? ইউরোপ৷ তাই অনেকেই আসছেন ইউরোপে৷ ছবিতে দামেস্কের এক আবাসিক এলাকায় প্রেসিডেন্ট বাশারের অনুগত বাহিনীর হামলার পর ধ্বংসস্তূপের মাঝে এখনো কেউ বেঁচে আছেন কিনা দেখছেন সিরীয়রা৷
ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমে তুরস্কে যায় সিরীয়রা৷ ইজমিরের কোনো হোটেলে উঠেই তাঁরা শুরু করেন মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে সমুদ্রপথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা৷ যাঁদের হোটেলে ওঠার সাধ্য নেই তাঁরা রাস্তার পাশে কিংবা পার্কে তাঁবু তৈরি করে দু-এক রাত কাটিয়ে নেন৷ ছবির এই মেয়েটির মতো ইউরোপে আসার আগে অনেক সিরীয়কেই ঘুমাতে হয় তুরস্কের রাস্তায়৷
তুরস্ক থেকে প্রায় সবাই ছোটেন গ্রিসের দিকে৷ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এই দেশটিতে শুধু ইউরোপে প্রবেশের জন্যই আসা৷ আসল লক্ষ্য পশ্চিম ইউরোপের উন্নত দেশগুলো৷ ছবিতে ডিঙ্গি নৌকায় তুরস্ক থেকে গ্রিসের কস দ্বীপের দিকে যাত্রা শুরু করা কয়েকজন সিরীয়৷
কস দ্বীপ থেকে গ্রিসের মূল ভূখণ্ডের দিকে যাচ্ছে একটি ফেরি৷ ১০ ঘণ্টার যাত্রাপথ৷ কোনো জায়গা না পেয়ে যাত্রীদের আসনের নিচেই ঘুমিয়ে নিচ্ছে এক সিরীয় কিশোরী৷
কস দ্বীপ থেকে মেসিডোনিয়া হয়ে ইডোমেনি শহরে যান অনেকে৷ ‘বলকান রুট’ ব্যবহার করে অনেকে বাধ্য হয়ে সার্বিয়ার দিকেও যান৷ গত মাসে ‘জরুরি অবস্থা’ জারি করে শরণার্থীদের ঠেকাতে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোরও ঘোষণা দেয় মেসিডোনিয়া৷ সহজে সীমান্ত পার হওয়া যাবে ভেবে শুরু হয় সার্বিয়ার দিকে যাত্রা৷ ছবির এই ট্রেনের মতো অনেক ট্রেনই গিয়েছে এমন মানুষবোঝাই হয়ে৷
ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড যেন শুধুই বিশ্রামাগার৷ এ শহরে বিশ্রাম নিয়েই সবাই পা বাড়ান প্রকৃত গন্তব্যের দিকে৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের প্রথম ৬ মাসে সিরিয়া থেকে অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ গিয়েছেন বেলগ্রেডে৷ এখানে বেলগ্রেডের এক পার্কে বিশ্রাম নিচ্ছেন কয়েকজন সিরীয় শরণার্থী৷
সার্বিয়া থেকে শরণার্থীরা যাচ্ছেন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে৷ বুদাপেস্টও ‘বিশ্রামালয়’৷ তবে হাঙ্গেরি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে৷হাঙ্গেরি সরকার চায় যাঁরা এসেছেন তাঁরা সেখানেই নাম নথিভূক্ত করাক৷ তা করলে হাঙ্গেরিতেই থাকতে হবে৷ কিন্তু অভিবাসন প্রত্যাশীরা চান জার্মানি যেতে৷ ছবিতে এক কিশোরীর হাতে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ছবি৷
হাঙ্গেরি থেকে কয়েক হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী চলে এসেছেন অস্ট্রিয়া এবং জার্মানিতে৷ নতুন ঠিকানায় এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অনেকেই৷ অভিবাসনবিরোধী ডানপন্থি দলের শাসনাধীন দেশ হাঙ্গেরি থেকে বেরিয়ে আসতে পারাই তাঁদের জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তি৷ জার্মানিতে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্যরকম৷ মিউনিখে শরণার্থীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে বরণ করে নিয়েছেন জার্মানরা!
মিউনিখের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনে এক সিরীয় নারী অভিবাসনপ্রত্যাশীর কোলে সন্তানকে তুলে দিচ্ছেন এক জার্মান পুলিশ৷ সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বরণ করে নিয়েছে৷ কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়ে গেছে অভিবাসন ইস্যু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা৷ এত বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর আগমন অনেক ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা৷
সূত্রঃ ডয়েচে ভেলে
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে